MPEDA প্রতিষ্ঠার ৫০ তম বছরপূর্তি উদযাপন শুরু হচ্ছে বুধবার থেকে

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুপ্রিয়া প্যাটেল কোচি-তে এই স্বর্ণজয়ন্তী উৎসবের শুভ উদ্বোধন করবেন
Kochi / August 23, 2022

 

কোচি, ২৩ শে আগস্ট: বিশ্বজোড়া কঠোর প্রতিযোগিতার মাঝে ভারতের সামুদ্রিক পণ্যগুলিকে বিশ্বজনীন ব্র্যান্ডে পরিণত করে তোলার অসামান্য কৃতিত্বের অধিকারী সংস্থা মেরিন প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (MPEDA) তাদের পঞ্চাশতম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করতে চলেছে। এই সংস্থা দেশের উপকূলবর্তী রাজ্যগুলির সীফুড ইন্ডাস্ট্রি-কে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে।

বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অন্যতম বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে ১৯৭২ সালে MPEDA প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই বছর এই সংস্থা তাদের পথ চলার পঞ্চাশ বছরে পদার্পণ করেছে। তাদের সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারতের সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানি ইতিমধ্যে ১.৪ মিলিয়ন টনে (৫৭,৫৮৬ কোটি টাকা) পৌঁছে গিয়েছে। যখন এই সংস্থার যাত্রা শুরু হয়েছিল, তখন এই পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৫,৫২৩ টন এবং গোটা বিশ্বে সেরা সীফুড উৎপাদনকারী হিসেবে ভারত বর্তমানে যে স্বীকৃতি অর্জন করেছে তার কৃতিত্ব সম্পূর্ণ ভাবে এই সংস্থার প্রাপ্য।

বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শ্রীমতি অনুপ্রিয়া প্যাটেলের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন হতে চলেছে আগামী ২৪ শে আগস্ট। বলগাট্টি দ্বীপে গ্র্যান্ড হায়াত-এ আয়োজিত এই চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠানে MPEDA এক্সপোর্ট অ্যাওয়ার্ড এবং MPEDA গোল্ডেন জুবিলি মেরিন কোয়েস্ট ২০২২ –এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বিতরণ দেখা যাবে।    

এই বছর দেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৭৫তম বছর উদযাপন করার লক্ষ্যে আজাদি কা অমৃত মহোৎসব পালিত হচ্ছে, তার পাশাপাশি বুধবারের এই অনুষ্ঠানে যোগ দান করবেন শ্রী দিবাকর নাথ মিশ্র, ভারত সরকারের বাণিজ্য দপ্তরের যুগ্ম-সচিব, MPEDA এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্রী টি. কে. এ নায়ার (প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা), কেরালা স্টেট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন চেয়ারম্যান শ্রী পল অ্যান্টনি (কেরালার প্রাক্তন মুখ্য সচিব);  এবং সীফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশান অফ ইন্ডিয়া (SEAI) -এর জাতীয় সভাপতি শ্রী জগদীশ ফোফানডি। 

MPEDA এর চেয়ারম্যান শ্রী ডোড্ডা ভেঙ্কট স্বামী বলেছেন, স্বর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের বছরে এই সংস্থার অন্যতম লক্ষ্য হল গুণমান এবং স্থায়িত্বকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি একটি সর্ব-ভারতীয় নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে মৎস্যসম্পদ, ভ্যালু সংযোজনকারী পণ্য এবং বাজারে প্রচার চালানোর মতো বিষয়গুলির উপরে ভিত্তি করে প্রতিফলিত মাইলফলকগুলিকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

তিনি আরও জানিয়েছেন, “আমরা এই মুহূর্তে দ্বিবার্ষিকী ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সীফুড শো (IISS)-এর ২৩তম সংস্করণের আয়োজন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কলকাতাতে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজিত হতে চলেছে এই অনুষ্ঠান, যা ভারতীয় সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানিকারী ব্যবসায়ী এবং বিদেশের আমদানিকারীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের একটি অতুলনীয় মঞ্চে পরিণত হতে চলেছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের রপ্তানির পরিমাণ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে MPEDA একটি এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শ্রী ডোড্ডা ভেঙ্কট স্বামী উল্লেখ করেছেন, “এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বার্ষিক ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি প্রয়োজন। আমাদের এই হার বজায় রাখতে হবে এবং ক্রমশ বৃদ্ধি করতে হবে, একমাত্র তাহলেই এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব।”

এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য, MPEDA অন্তত আরও ২০টি নতুন রপ্তানির বাজার চিহ্নিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে রপ্তানির পরিমাণ অন্তত ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রতিটি বাজারের জন্য একজন করে আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হবে। আধিকারিক তাঁর দায়িত্বপ্রাপ্ত বাজারে রপ্তানির সম্ভাবনা পরিমাপ করবেন এবং সেখানকার ট্রেন্ডের দিকে নজর রাখবেন। এছাড়াও, অন্যান্য পরিকল্পনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বাজার সম্পর্কিত মাসিক আপডেট প্রকাশ করা এবং রপ্তানিকারী ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য ক্রেতাদের তথ্যসমৃদ্ধ ডিরেক্টরি প্রস্তুত করা। MPEDA-এর বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে রাজ্যগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কারণে, প্রতিটি রাজ্যের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রাজ্য-ভিত্তিক এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান তৈরির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়াতে টাকার বিনিময়ে সীফুড রপ্তানি করার লক্ষ্যে উদ্যোগপতিদের চিহ্নিত করার মতো বিকল্প নিয়েও এই সংস্থা চিন্তাভাবনা করছে।     

শ্রী স্বামী জানিয়েছেন, এই দশকের শুরুতেই কোচিন পোর্ট ট্রাস্ট-এর সাথে MPEDA একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেছে, যার ফলস্বরূপ এক ডজনেরও বেশি মূল ফিচার সহযোগে কোচিন ফিশারিজ হারবার-এর আধুনিকীকরণ করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, এর মাধ্যমে এখানে সমুদ্র থেকে ধরা বিভিন্ন পণ্যের ইউনিট মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং তার পাশাপাশি মাছ ধরা পোস্ট হার্ভেস্ট পরবর্তী ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্বাক্ষরিত মউ-এর ফলে ১৪০-কোটি টাকার প্রোজেক্ট পাওয়া সম্ভব হয়েছে, এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন স্কিমের সৌজন্যে প্রাপ্য সম্পদ কাজে লাগানো হবে।    

MPEDA তার বিভিন্ন প্রোগ্রাম এবং কার্যক্রম আরও প্রসারিত করার লক্ষ্যে তিনটি মিত্র সংস্থা নির্মাণ করেছে, এগুলি হল তামিলনাড়ুর সিরকালি-তে অবস্থিত RGCA (রাজীব গান্ধী সেন্টার ফর অ্যাকুয়াকালচার), এই সংস্থা মূলত বৈচিত্র্যপূর্ণ অ্যাকুয়াকালচার নিয়ে কাজ করে যেমন, সী-বাস জাতীয় মাছ, মাড ক্র্যাব বা জাত কাঁকড়া এবং GIFT (তেলাপিয়া)। এছাড়াও এই সংস্থা আন্দামানে ব্ল্যাক টাইগার শ্রিম্প প্রজাতির চিংড়ি নতুন করে চাষ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। MPEDA-এর অপর দুটি সহযোগী সংস্থার মধ্যে অপর একটি হল কোচি-তে অবস্থিত NETFISH (নেটওয়ার্ক ফর ফিশ কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাস্টেনেবল ফিশিং), এরা মূলত মৎস্যচাষীদের বর্ধিত পরিষেবা প্রদান করে এবং রিয়েল-টাইম ক্যাচ ডেটা সংগ্রহ করে ও রপ্তানির লক্ষ্যে শংসাপত্র পেতে সাহায্য করার জন্য সেই তথ্যগুলির বৈধতা যাচাইয়ের কাজে সহায়তা করে। তৃতীয় সংস্থাটি হল অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়াতে অবস্থিত NaCSA (ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাস্টেনেবল অ্যাকুয়াকালচার), এরা মূলত ক্লাস্টার ফার্মিং নিয়ে কাজ করে এবং সাধারণ পরিকাঠামোগত সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।

এছাড়াও, MPEDA একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম e-E-SANTA চালু করেছে, এর লক্ষ্য হল চাষি এবং রপ্তানিকারী ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা।

অপর একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হল, এমন একটি সিস্টেম চালু করা যা EU ক্যাচ এবং ICCAT (দ্য ইন্টারন্যাশনাল কমিশন ফর দ্য কনজার্ভেশান অফ অ্যাটলান্টিক টুনাস) শংসাপত্র যাচাই করবে, তার পাশাপাশি মাছ বাজারজাত করা  পূর্ববর্তী (প্রি-হার্ভেস্ট) পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য ১৬টি ELISA ল্যাব চালু করা হয়েছে। গত দশকে চাষিদের জন্য ২০টি অ্যাকুয়া ওয়ান সেন্টার চালু করা হয়েছে যারা ক্ষতিকারক রাসায়নিক-মুক্ত চিংড়ির জন্য শংসাপত্র প্রদান করে, তার পাশাপাশি এরা ভার্চুয়াল বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্ম E-SANTA এবং মাড-ক্র্যাব বা জাত কাঁকড়া হ্যাচারি টেকনোলজির জন্য একটি পেটেন্ট অর্জন করেছে।

তিনি বলেছেন, “২০২০ সালের প্রথম দিকে আমাদের বিভিন্ন ভেঞ্চার, বিভিন্ন নতুন স্টাডি, নতুন বিদেশী বাজারে পণ্য সরবরাহ করা এবং সংরক্ষণমূলক উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করার ফলে আমরা এগুলি অর্জন করেছি। এই MPEDA এর সৌজন্যে ভারতীয় সীফুড ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করা সংস্থা RGCA বাণিজ্যিক কারণে মাড ক্র্যাব সীড বা জাত কাঁকড়ার বীজ উৎপাদন নিয়ে কাজ করছে।”    

এই প্রতিটি মাইল ফলক অতিক্রম করা সম্ভব হয়েছে MPEDA-এর আধুনিকীকরণের ফল হিসেবে। শ্রী স্বামীর কথায়, “এর ফলে শুধু যে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তা নয়, বরং আমরা ব্যাপক হারে প্রচারমূলক অভিযান চালিয়েছি, গবেষণা এবং শিবিরের আয়োজন করেছি, তার পাশাপাশি প্রতিটি বড় বাজারের কথা মাথায় রেখে মহামারী চলাকালীন আমরা ভার্চুয়াল ক্রেতা-বিক্রেতা সমাবেশের আয়োজন করেছি, যার ফলে ব্যবসার পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে।  

তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “১৯৭০ এবং ৮০-এর দশকে, আমেরিকা এবং জাপান ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় ক্রেতা, যে কারণে MPEDA টোকিও এবং নিউ ইয়র্কে ট্রেড প্রোমোশন অফিস খুলেছে। প্রায় সেই সময় থেকেই আমরা বাণিজ্যিক ভাবে চিংড়ির হ্যাচারি নিয়েও কাজ শুরু করেছিলাম।”

“বুধবারের জমকালো অনুষ্ঠানে (২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১)এ সাতটি বিভাগে দুর্ধর্ষ পারফর্মেন্সের জন্য MPEDA এক্সপোর্ট অ্যাওয়ার্ড বিতরণ করা হবে। অফলাইন নির্বাচন পদ্ধতির উপরে ভিত্তি করে এখানে সেরা সামুদ্রিক পণ্য উৎপাদনকারী ও রপ্তানীকারীদের পুরস্কৃত করা হবে।

Photo Gallery

+
Content
+
Content
+
Content